দৈনন্দিন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার | Use of information technology

 দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার”

ভূমিকাঃ

যন্ত্র বা কৌশল ব্যবহার করে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করাই হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রতিদিন আমরা নানা কাজে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করি। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরও উন্নত, সহজ এবং আরামদায়ক করেছে। যেমন – বর্তমানে আমাদের মোবাইলের শব্দ শুনে ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু কিছুদিন আগেও আমাদের সকাল বেলা মোরগের ডাক এবং পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গত।

আমরা প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে প্রযুক্তির ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছি। তাই বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে এগুলো পরিবেশ দূষণের কারন না হয়। আমাদের জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। যেমন – বাসস্থান, যাতায়াত, শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, খেলাধুলা ও বিনোদন ইত্যাদি।

একুশ শতক হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। বর্তমানে পৃথিবীটা আসলে জ্ঞানভিত্তিক একটা অর্থনীতির উপর দাঁড়াতে শুরু করেছে। একবিংশ শতাব্দিতে এসে দুটি নতুন বিষয়ের সাথে আমাদের পরিচয় হয়েছে- যার একটি হচ্ছে Globalization, অন্যটি হচ্ছে Internationalization। এই দুটি বিষয় ত্বরান্বিত হওয়ার পেছনের কারণটি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। তথ্য সংগ্রহ, এর সত্যতা এবং বৈধতা যাচাই, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, আধুনিকীকরণ, পরিবহন, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিকে বলা হয় তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology-IT) ।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি?
তথ্য প্রযুক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ ইনফরমেশন টেকনোলজি (Information Technology)।একে সংক্ষেপে IT (আইটি) নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত কোন তথ্য রাখা  এবং একে ব্যবহার করার প্রযুক্তিকেই তথ্য প্রযুক্তি বলে।  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?  সার্বিকভাবে বলতে গেলে কম্পিউটার এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিনিময় বা পরিবেশনের ব্যবস্থাকে তথ্য প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ মাধ্যমের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। তাই বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত বিষয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) হলো, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, যোগাযোগ এবং প্রচারকে সহজতর করার জন্য ব্যবহৃত এক ধরনের প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা উন্নতির চরম শিখায় পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছি। শুধু কি তাই? আজকে আমরা ঘরে বসে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারছি শুধুমাত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে। বুঝতে পারছেন তো ICT কি। এবার চলুন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দশটি ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে জেনে নেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

আমাদের আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার তুলে ধরবো। আপনি যদি এ বিষয়ে না জেনে থাকেন তবে অত্যন্ত মনোযোগসহ পুরো পোস্টটি পড়ে নিন।
১. যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার
কিছু বছর আগেও এই জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হতো চিঠি, টেলিগ্রাম ইত্যাদি। এটি ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, অর্থাৎ আজ চিঠি কোথাও পাঠালে তা পৌঁছাতে আরো সাত দিন সময় লাগতে পারতো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের সবচেয়ে বড় ছোঁয়া লেগেছে যোগাযোগ ক্ষেত্রে। বর্তমানে আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যোগাযোগ ক্ষেত্রে যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা হল:

  • ছবি, ভিডিও এবং অডিও এর মাধ্যমে খুব দ্রুত তথ্যের আদান প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব,
  • ফেসবুক, twitter এবং instagram ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল মানুষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব, 
  • অনলাইনের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করা সম্ভব,
  • ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসারের ফলে বর্তমানে ইন্টারনেটের খরচ দিন দিন কমে আসছে, ফলে ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে,
  • ইমেইল, মেসেজ এবং অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমে ‌ মুহূর্তের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যোগাযোগ ক্ষেত্রে যেভাবে শুভ ফল প্রদান করেছে ঠিক একই রূপে কিছু খারাপ ব্যবহার ও লক্ষ্য করা যায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নেতিবাচক বিভিন্ন দিকের মধ্যে অন্যতম হলো:

ইন্টারনেটে ব্যাপক রূপে তথ্যের ভুল প্রচার হতে দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই না করেই মানুষ বিভিন্ন রকমের ভুলভ্রান্তিতে জড়িয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে মানুষের সাথে মানুষের আই কন্টাক্ট বা মুখোমুখি যোগাযোগের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, এখন মানুষ ইন্টারনেটে কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। ইন্টারনেটে বেশিরভাগ মানুষ ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে বেশি পছন্দ করেন। ব্যক্তিগত তথ্য বেশি শেয়ারের ফলে পরবর্তীতে গোপনীয়তা হারানোর সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং যেহেতু যোগাযোগ ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কিছুটা নেতিবাচক দিক রয়েছে তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।

২. কৃষি খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গবেষকরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রি এ পর্যন্ত ৬৭টি এবং বিনা ১৪ টি নতুন উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। ডায়াবেটিকবান্ধব ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাতের গবেষণায় বিশ্বে প্রথম সফল হয়েছেন বাংলাদেশের গবেষকরা।

আমরা কিন্তু কৃষির উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। আর এই কৃষি খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) অনবদ্য ভূমিকা রাখছে। কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দক্ষতা এবং সেই সাথে লাভ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে ICT| তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার এর মধ্যে এটি অন্যতম। আইসিটি ব্যবহার করে কৃষকরা যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গা থেকে কৃষি তথ্য অনুসন্ধান করতে পারছে। এটি কৃষকদের তাদের চাষের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই খুঁজে পেতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করে।

ICT ব্যবহার করে কৃষকরা কৃষি প্রযুক্তি যেমন কৃষি যন্ত্রপাতি, সার এবং কীটনাশক কি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে তার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে। আবার এর মাধ্যমে কৃষকরা তাদের কৃষি পণ্যগুলোকে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রক্রিয়াতেই বিপণন করতে পারছে। এভাবে বিক্রয় বৃদ্ধিতে আইসিটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং বলা যেতে পারে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং পরিবারের জন্য একটি ভাল ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

৩. চিকিৎসা সেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্যপ্রযুক্তি চিকিৎসা সেবায় অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। এ ছাড়াও দেশে টেলি-মেডিসিন সেবার দ্রুত বিকাশ ঘটছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার স্কাইপের মাধ্যমে ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।

একবার অনলাইনে নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে রোগী বাড়িতে বসেই তথ্য পেয়ে যাবেন তার ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোনে। যে সব ডাক্তার এই সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন তারা পুনঃপুন আপডেট পাবেন সেই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনকৃত রোগীর সার্বিক ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবেন খুব নিমিষেই। এই সফটওয়্যার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যেমন রোগের চিকিৎসা চলছে, তেমনি গ্রামাঞ্চল বা মফস্বলের প্রশাসনিক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। বর্তমানে রোগ নির্ণয় করা থেকে যেকোনো জটিল ও কঠিন অস্ত্রোপচারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেসব সেক্টরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল:
  • টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে, 
  • রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য, রোগীর পূর্ব ইতিহাস ইত্যাদি সবই জানা যায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে, 
  • ভিডিও কল এবং ইমেইল এর মাধ্যমে দূরে বসেও ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে, 
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগীর সকল ধরনের তথ্য ডিজিটাল ভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব, 
  • বর্তমানে যেহেতু ঘরে ঘরে স্মার্ট ফোন ব্যবহৃত হয় সেহেতু মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোন সেবা মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজে নিতে পারছে, 
  • বর্তমানে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা তাদের গবেষণার কাজে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।


৪. শিল্প উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
যোগাযোগ ক্ষেত্রের পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবদান রেখে চলেছে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে। চলুন এক নজরে দেখে আসি ব্যবসার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব গুলো কি কি: 
  • দ্রুত তথ্যের আদান-প্রদান নিশ্চিত করে, 
  • বাজার গবেষণা করতে সাহায্য করে, 
  • মানব সম্পদ উন্নয়ন করার পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয় করতে সাহায্য করে, 
  •  বিশ্বব্যাপী ব্যবসা নিশ্চিত করে, 
  • গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করে, 
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও কে সহজ করে তোলে, 
  • ই কমার্স এবং অনলাইন পেমেন্ট নিশ্চিত করে, 
  • কম্পিউটারাইজড মেশিন এর ব্যবহার সুবিধাজনক করে তোলে, 
  • ভিডিও কনফারেন্সিং এবং মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাজারের চাহিদা পর্যবেক্ষণ, প্রতিযোগীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানা এবং বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারের গবেষণা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণ ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে হাতের নাগালে আনা সম্ভব, এতে করে ব্যবসায়ের প্রসারতা যেমন বৃদ্ধি পায় ঠিক একইভাবে মুনাফা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়া আধুনিক বিশ্বে ই-কমার্স এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে হিসাব সংরক্ষণের জন্য এখন ব্যবহৃত হচ্ছে একাউন্টিং সফটওয়্যার এবং ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

৫. শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ডিজিটাল নজরদারীর আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছবিযুক্ত পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ তৈরি করে উক্ত ডাটাবেইজের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আওতায় নেয়াও হচ্ছে।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে অনলাইনে ভর্তি আবেদন, শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয় প্রবেশপত্র, প্রশংসাপত্র, ডিজিটাল আইডি কার্ড, ছাড়পত্র প্রিন্ট, প্রতিষ্ঠানের সব অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল তৈরি ও অনলাইনে ডাউনলোড, পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, গ্রেডিং সিস্টেমের ফলাফল প্রকাশ, শিক্ষক/শিক্ষার্থীর বায়োমেট্রিক অনলাইন হাজিরা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থীদের পেমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য এসএমএস, শিক্ষক/কর্মচারীদের ছুটি ব্যবস্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের স্বয়ংক্রিয় হিসাব ব্যবস্থাপনা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি প্রদান ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরার সাহায্যে অনলাইন নজরদারী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে এসএমএস নোটিফিকেশন প্রেরণসহ আরও অনেক সুবিধা।

শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতকরণে শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছে। শিক্ষার প্রচলিত ধারার শিখন-শেখানো পদ্ধতির পরিবর্তে শিখন-শেখানো পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগ ঘটানো হয়েছে।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের পাশাপাশি শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম ও স্পীকারের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এ শ্রেণীকক্ষকেই বলা হচ্ছে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’। ‘তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা নয়, শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে দেশের সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, যেন কঠিন, দুর্বোধ্য ও বিমূর্ত বিষয়সমূহকে শিক্ষকগণ ছবি, এ্যানিমেশন ও ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করার মাধ্যমে শ্রেণী কার্যক্রমকে আনন্দময় করে তুলতে।
৬. মহাকাশ অভিযানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

আকাশে দৃশ্যমান বস্তুগুলাে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার সূচনা ঠিক কবে ঘটেছিল তা সঠিক করে বলা যাবে না। তবে ১৬৮৭ সালের ৫ জুলাই স্যার আইজাক নিটউন তার Mathematical Principles of Natural Philosophy গ্রন্থে সর্বজনীন মহাকাশ তত্ত্বের বক্তব্য সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন। বিংশ শতাব্দীতে তরল জ্বালানির মাধ্যমে রকেট ইঞ্জিন নির্মিত হওয়ার পূর্বে মহাকাশ অভিযান সম্ভব হয়নি।
মহাকাশযাত্রা ব্যবহারিক মাত্রা পেয়েছে রকেট ইঞ্জিন আবিষ্কার হওয়ার পর। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ প্রযুক্তির মাধ্যমে বহির্বিশ্বে অভিযান পরিচালনার নাম মহাকাশ অভিযান। মহাকাশ অভিযানের জন্য ব্যবহৃত নভােযানগুলােতে মানুষ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। মনুষ্যবাহী নভােযানের তুলনায় রােবটিকস নভােযানের সংখ্যা অনেক বেশি। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সােভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম স্পুতনিক-১ নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে যার মাধ্যমে মহাকাশ হতে প্রথমবারের মতাে সংকেত পাওয়া সম্ভব হয়।
৭.গবেষণা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গবেষণা হল জ্ঞান অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আর এই গবেষণাকে আরও সহজ, দ্রুত কার্যকর করে তুলেছে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি।

গবেষণায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার:

১. তথ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ:
ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়। নানা ধরনের সফটওয়্যার অ্যাপ ব্যবহার করে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করাও এখন খুব সহজ।

২. গবেষণাপত্র বইপত্র খোঁজার সুবিধা:
বিভিন্ন ডিজিটাল লাইব্রেরি, জার্নাল অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অগণিত গবেষণাপত্র বইপত্র সহজেই পাওয়া যায়। যেমন: Google Scholar, ResearchGate, JSTOR ইত্যাদি। ফলে গবেষকরা সময় পরিশ্রম সাশ্রয় করতে পারেন।

৩. কম্পিউটার সিমুলেশন মডেলিং:
বিজ্ঞান, প্রকৌশল পরিবেশগত গবেষণায় কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে বাস্তবের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে গবেষণা করা যায়। এটি পরীক্ষার খরচ সময় কমায়।

৪. তথ্য সংরক্ষণ উপস্থাপন:
গবেষণায় সংগ্রহ করা উপাত্ত কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা যায়, যাতে তা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। প্রেজেন্টেশন, চার্ট, গ্রাফ ইত্যাদির মাধ্যমে সহজে ফলাফল উপস্থাপন করা যায়।

৫. বিশ্বব্যাপী গবেষণা যোগাযোগ:
ইমেইল, ভিডিও কনফারেন্স, গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকদের সাথে সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। এতে অভিজ্ঞতা জ্ঞান আদান-প্রদান হয়।

গবেষণার কাজ এখন আর শুধু লাইব্রেরি বা পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ নয়। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি গবেষণাকে করেছে দ্রুত, আধুনিক, বিশ্বমানের। ভবিষ্যতে গবেষণার আরও অগ্রগতির জন্য ICT-এর কার্যকর ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে।

৮. পরিবহন ব্যবস্থাপনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

আধুনিক যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে পরিবহন ব্যবস্থাপনায় এর ব্যবহার একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ICT-এর সহায়তায় পরিবহন এখন অধিকতর সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও দক্ষ হয়ে উঠেছে।

১. ডিজিটাল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
বর্তমানে শহরের রাস্তাগুলোতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল, ক্যামেরা এবং সেন্সর ব্যবহার করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে যানজট কমে, দুর্ঘটনার হার হ্রাস পায় এবং রাস্তাগুলো আরও কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়।

২. জিপিএস জিআইএস প্রযুক্তি:
জিপিএস (GPS) প্রযুক্তির সাহায্যে যানবাহনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। জিআইএস (GIS) ব্যবহার করে রুট পরিকল্পনা, রাস্তার অবস্থা বিশ্লেষণ উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। এটি পণ্য পরিবহন যাত্রী পরিবহনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৩. অনলাইন টিকেটিং রাইড শেয়ারিং:
বাস, ট্রেন বা বিমানে যাত্রার জন্য অনলাইন টিকিট বুকিং এখন খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া রাইড শেয়ারিং অ্যাপ যেমন উবার, পাঠাও, ওভাই ইত্যাদি ICT-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

৪. সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা:
সিসি ক্যামেরা, স্পিড মনিটরিং সিস্টেম এবং যানবাহনের ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা ব্যবহার করে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এসব প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য।

৫. পরিবহন পরিকল্পনা বিশ্লেষণ:
ডেটা অ্যানালাইসিস এবং সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি শহরের বা দেশের পরিবহন ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত—তা পরিকল্পনা করা যায়। এটি সুষ্ঠু নগর উন্নয়নেও সহায়ক।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার পরিবহন ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এটি পরিবহন ব্যবস্থাকে করেছে অধিকতর দক্ষ, নিরাপদ, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির আরও উন্নত ও ব্যাপক ব্যবহার পরিবহন খাতে আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ICT-এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

৯. সরকারের কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

ICT এর মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রম আরও জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের কাছে আরও সহজলভ্য করে তোলা সম্ভব হয়েছে। সরকার ICT এর মাধ্যমে জনগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের সেবা প্রদান করতে পারে এবং তাদের তথ্য পরিচালনা করতে পারে। এটি সরকারের কাজকে আরো সহজ, আকর্ষণীয় আর প্রাণবন্ত করে তুলেছে। অফিস, আদালত থেকে শুরু করে রাস্তা, কালভার্ট তথা সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে।
১০. ব্যবসায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) আধুনিক যুগের এক অনন্য আবিষ্কার, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে এক বিপ্লব এনেছে। বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ICT-এর গুরুত্ব অপরিসীম। আগের দিনের মতো শুধু মুখে মুখে বা কাগজ-কলমে ব্যবসা পরিচালনা করার দিন আর নেই। এখন ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে।

ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসা আজ খুব জনপ্রিয়। ICT-এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সেবার বিজ্ঞাপন সহজেই প্রচার করতে পারছেন, আর গ্রাহকরাও ঘরে বসেই পছন্দমতো পণ্য অর্ডার করতে পারছেন। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদির ব্যবহার ব্যবসাকে আরও সহজ ঝামেলামুক্ত করে তুলেছে।

অফিস ব্যবস্থাপনায়ও ICT গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হিসাব রক্ষণ, কর্মচারী ব্যবস্থাপনা, পণ্য মজুদ এবং বিক্রয় বিশ্লেষণ ইত্যাদি এখন সবই করা যায় বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং অ্যাপের মাধ্যমে। এতে সময় খরচ উভয়ই সাশ্রয় হয় এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে।

বিশ্বব্যাপী ব্যবসা সম্প্রসারণেও ICT গুরুত্বপূর্ণ। ইমেইল, ভিডিও কনফারেন্স, ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এখন অনেক সহজ হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে ছোট মাঝারি ব্যবসার জন্যও।

সবশেষে বলা যায়, ব্যবসায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুধু সময়ের দাবি নয়, এটি একটি চূড়ান্ত প্রয়োজন। এর যথাযথ ব্যবহার ব্যবসাকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের জীবনে কেন প্রয়োজন?
জীবনকে সহজ স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং গতিশীল করতে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশেষ প্রয়োজন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্র সমূহ কি কি?
আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর অবদান উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে, শিক্ষা খাত, বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা, কৃষি, শিল্প এবং চিকিৎসা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বহুল ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন, কৃষি, শিল্প এবং গবেষণাকে আরও উন্নত করতে পারি





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url